
প্রলয় হাসান এর রাইটিং কোর্সের অভিজ্ঞতা
আমি ইউএসএআইডি এর অর্থায়নে একটা প্রকল্পে কাজ করতাম। হুট করে ট্রাম্প অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের হুকুমে ইউএসএআইডি এর অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমি সহ অনেক এনজিও কর্মীরই চাকরি চলে যায়। কিন্তু আমি থেমে থাকার মানুষ নই।
আমি জানি এমন অবস্থায় এনজিও এর চাকরি খুঁজে পাওয়াটা খুব একটা সহজ না।
আমার জন্য এটা আর blue ocean নেই।
তাই ভাবছিলাম কি করা যায়। লেখক প্রলয় হাসানের পেজ আগে থেকেই ফলো করা ছিলো, জানতাম উনি রাইটিং এর কোর্স করান। আমি নিজেও মার্কেটিং এর স্টুডেন্ট, কনটেন্ট রাইটিং আমার জন্য একটা নতুন পথ হতে পারে ভেবে যোগাযোগ করলাম।
ইতোমধ্যে ওরিয়েন্টেশন ক্লাস সহ চারটা ক্লাস অতিক্রম করেছে। তাই একটা রিভিউ লিখতে বসলাম, নিজের একটা ওয়েবসাইট করার পরিকল্পনাও ছিলো, সেটাও শুরু হলো, প্রথম পোস্ট না হয় লেখালেখির কোর্সের অংশ হিসেবেই শুরু হোক।
বলে রাখা ভালো, একেবারে কোর্স শেষ না করা পর্যন্ত এই লেখাটা আপডেট চলতেই থাকবে।
কেনো
মনে হতে পারে রাইটিং এর কোর্স কেনো? এই বিষয়টার কয়েকটা কারণ আছে
- মার্কেটিং এর স্কিল সহজে আনা যায়: আমি মার্কেটিং এর স্টুডেন্ট, মার্কেটিং এ কপিরাইটিং, রিপোর্টিং, প্রপোজাল রাইটিং, সেলস পিচিং কতো ধরণের কাজ যে আছে, আমার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে কর্পোরেটে সোশ্যাল বিজনেস ডেভেলপমেন্টের ১১-বছরের অভিজ্ঞতা খুব সহজেই রাইটিং স্কিলের মাধ্যমে প্রচার করা তো সম্ভবই, বরং অন্যান্য অনেককেই বোঝানো সম্ভব যে একজন মার্কেটার হিসেবে আমি এখন লেখালেখি সংক্রান্ত কাজে মনোনিবেশ করছি।
- এআই এর যুগেও লেখকের চাহিদা থাকবে: এটা শুধু আমার কথা না, প্রলয় হাসানের কোর্সেও উনি বলেছেন মানুষ লেখার মধ্যে যে মানবিক একটা অনুভূতি পায়, এআই সেটা আনতে অনেকদিন লাগবে, হয়তো পারবেও না। আমিও বিভিন্ন রিসোর্স থেকে পড়াশুনা করে যা বুঝেছি তা হলো এআই আপনাকে নকল করে আপনার লেখার মতো অন্য একটা লেখা তৈরি করে দিতে পারে, কিন্তু একেবারে আনকোরা একটা ধারণা থেকে নতুন লেখা লিখে দিতে পারবে না। একটু খেয়াল করে পড়লেই এআই দিয়ে কোনও লেখা বোঝা যায়।
- সহজে ট্র্যাক বদলানো সম্ভব: আজ আমি বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নিয়ে লিখতে পারি, কাল হয়তো মন চাইলে পার্সোনাল ফাইন্যান্স নিয়ে লিখতে পারি, লেখালেখির কাজে এই বিষয়টা খুব স্বাচ্ছন্দ্যের। হ্যাঁ, নিজেকে নিশ টপিকে স্পেশালাইজড প্রমাণ করতে সময় লাগতে পারে, কিন্তু বিভিন্ন টপিকে লেখালেখি করে নিজেকে রাইটার হিসেবে তো এস্টাবলিশ করা সম্ভব।
কোর্সটা কেমন
যে জন্য লিখতে বসলাম, এখন আসা যাক সেই আসল আলোচনায়।
প্রলয় হাসান ভাইকে আমি মেসেঞ্জারে নক দিয়ে বলেছিলাম আমার এখন অল্টারনেটিভ একটা ক্যারিয়ার দরকার যেটা দিয়ে আবার আমি ঘুরে দাঁড়াতে পারি। উনি তখন বলেন উনার ১০ম ব্যাচের জন্য এনরোলমেন্ট চলছে, আমি চাইলে সেখানে জয়েন করতে পারি।
বেশি দেরি করিনি, মাথায় যখন পোঁকা ঢুকেছে, পেমেন্ট করে সিট সিকিউর করে ফেললাম।
ওরিয়েন্টেশন ক্লাসের দিন প্রলয় ভাই স্লাইডের মাধ্যমে দেখালেন রাইটিং ক্যারিয়ার বাংলাদেশে কেমন, রাইটিং কি এআই এর যুগে টিকে থাকবে কি না, বাংলা ভাষায় রাইটিং এর চাহিদা কেমন, ক্যারিয়ার আউটলুক কি ধরণের, কোন ধরণের মার্কেটপ্লেসে কেমন পেমেন্ট হতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি।
একটা কোর্সের যদি শুরুটাই হয় কোর্স সাবজেক্টের উপরে একটা সম্পূর্ণ ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেশন দিয়ে, আপনি যে ধরণের মানসিকতা নিয়েই কোর্স শুরু করেন না কেনো, আপনি ওই কোর্সের প্রতি নিজেকে কমিট করতে বাধ্য। হ্যাঁ, এমনই প্রলয় ভাইয়ের কোর্সটা।
আমি বিশ্বাস করতে শুরু করেছি যে আমি রাইটিং এ নিজেকে সহজেই প্রতিষ্ঠা করতে পারবো, এই ফিল্ড আমার জন্য প্রমিজিং।
সবার জন্যেই আসলে ফিল্ডটা প্রমিজিং, সেটা প্রলয় ভাইয়ের দ্বিতীয় কোর্সেই টের পেলাম।
দ্বিতীয় ক্লাসে আমাদের সাথে প্রলয় ভাই আলোচনা করলেন রাইটিং কোন কোন জায়গায় ব্যবহৃত হয়।
একেবারে সহজ সাধারণ কনটেন্ট রাইটিং থেকে শুরু করে কপিরাইটিং, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, প্রোডাক্ট রিভিউ, স্ক্রিপ্টরাইটিং এমন কি নেই যেখানে আসলে ভালো লেখা লাগে না।
একটা বিজনেস করতে গেলে আপনাকে কমিউনিকেশন করতেই হবে, আর কমিউনিকেশন করতে হলে আপনাকে লিখিত একটা রেফারেন্স থাকতেই হবে যার উপর ভিত্তি করে আপনি কমিউনিকেশন সাজাবেন।
আপনি খুব কনফিডেন্ট একজন মানুষ হতে পারেন, আপনার কথা বলার ভঙ্গি খুব সুন্দর হতে পারে, আপনার হয়তো মানুষকে বোঝানোর খুব ভালো দক্ষতা থাকতে পারে, কিন্তু হঠাৎ করে আকস্মিক শব্দচয়ন সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। আর এখানেই যদি আপনার আগে থেকে কার সাথে কি কথা বলবেন প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন স্ক্রিপ্টের মাধ্যমে, স্বল্প কথায় বড়ো ইমপ্যাক্ট ফেলা খুবই সম্ভব।
আর এখানেই একজন ভালো লেখকের কারিশমা। একজন বক্তাকে হয় কোনও লেখকের শরণাপন্ন হতে হবে, অথবা নিজেকে ভালো শব্দের গাঁথুনি নিয়ে নিজের লেখা তৈরি করতে জানতে হবে। কমিউনিকেশনের সঠিক প্রস্তুতির প্রথম ধাপ হচ্ছে রাইটিং।
এই পুরো বিষয়টাকেই এতোটা সাবলীলভাবে প্রলয় ভাই তুলে ধরেছেন যে এই শিক্ষাটা স্থায়ী হয়ে যাবে আমার জন্য।
প্রলয় ভাইয়ের সাবলীল উপস্থাপনা, বিশাল অভিজ্ঞতা এবং নিজের একটা নেটওয়ার্ক, সবকিছু মিলিয়ে উনি একটা কমপ্লিট প্যাকেজ যেটা উনার সাথে সরাসরি কথা না বললে বোঝা সম্ভব নয়।
আমি নিজে সন্তুষ্ট এমন একটা কোর্সে নিজেকে এনরোল করেছি বলে।
আরেকটা কথা বলি, যেহেতু আর্লি রেজিস্ট্রেশন করেছি, তাই প্রলয় হাসান ভাই আমার জন্য উনার একটা বইও পাঠিয়েছেন আমার জন্য, এটাও একটা বোনাস। আপনারা প্রলয় হাসান ভাইয়ের কোর্সে এমন ফ্রি অফার পেতে চাইলে উনার যেই ব্যাচ শুরু হবে, সেখানে আগে ভাগে রেজিস্ট্রেশন করে ফেলবেন।